Dhaka ০৯:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরনাম:
নীরব হলো নির্ভীক কলম: চলে গেলেন শ্রীপুরের ‘প্রিয় জামাল ভাই’ তারাকান্দায় ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিনকে পিটিয়ে হত্যা, আটক ২ কালিয়াকৈর নৌকা ডুবি নিহতের পরিবারের হাতে চেক তুলে দেন কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউসার আহামেদ খাগড়াছড়ির পানছড়ি গহীন জঙ্গলে সেনা অভিযান ইউপিডিএফ এর গোপন আস্তানা উন্মোচিত অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার বন বিভাগের অভিযানে মাধবপুরে প্রভাবশালীর বাড়ি থেকে শালিক উদ্ধার ভালুকায় ওরিয়ন নিট টেক্সটাইলের উৎপাদন বন্ধ, বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ আপনাদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করতে এসেছি- পৃজা মান্ডপ পরিদর্শনে পল্লী বিদ‍্যুৎ জিএম হোসেনপুরে যুবক হত্যা: দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে স্মারকলিপি নবীপ্রেম ও মানবতার কবি শেখ সাদী (রহ.) রহনপুরে ইসলামী ব্যাংক গ্রাহক ফোরামের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত
বিজ্ঞাপন :
জেলা-উপজেলা ও বিভাগীয় চীফ নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। সাংবাদিকতায় আগ্রহীরা দ্রুত যোগাযোগ করুন। সম্পদক-ইমদাদুল হক তৈয়ব-01711576603, সিভি পাঠান এই ইমেইলে- editor.manobjibon@gmail.com

নবীপ্রেম ও মানবতার কবি শেখ সাদী (রহ.)

নবীপ্রেম ও মানবতার কবি শেখ সাদী (রহ.)

আবু সালেহ

রবিউল আউয়াল মাসসহ বছরের যেকোনো সময়ে বিশ্বব্যাপী মিলাদ-মাহফিলগুলোর আয়োজনে সর্বাধিক পঠিত ইরানের শিরাজের হযরত শেখ সাদী শিরাজী (রহ.) লিখিত নাতে রাসূল (সা.) —
“বালাগাল উলা বি কামালিহি, কাশাফাদ দুজা বি জামালিহি, হাসুনাত জামিউ খিসালিহি, সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহি।”

এই নাতে রাসূল সম্পর্কে এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, বিশ্বের মুসলমানদের মাঝে হয়তো এমন কোনো মুসলমান পাওয়া যাবে না, যিনি এই নাতে রাসূল (সা.) টি গাননি বা শুনেননি। জানা যায়, তাঁর বিখ্যাত “বালাগাল উলা বি কামালিহি…” এর শেষ লাইন স্বয়ং রাসূল (সা.) স্বপ্নযোগে তাঁকে শিখিয়ে দিয়েছিলেন।

হযরত শেখ সাদী শিরাজি (রহ.) সপ্তম হিজরীর মানুষ। তিনি একাধারে বিশ্ববিখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, সুফি সাধক ও নৈতিকতার শিক্ষক। তাঁর পুরো নাম শায়েখ আবু মুহাম্মদ মুসলেহুদ্দীন সাদী ইবনে আব্দুল্লাহ শিরাজি। তিনি ৬০৬ খ্রিষ্টাব্দে ইরানের শিরাজ শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

বাল্যকালে পিতাকে হারিয়ে এতিম হয়ে যান তিনি। তাঁর পিতা তাঁকে জ্ঞান শিক্ষার পাশাপাশি নেক আমল, সত্যবাদিতা, খেদমতে খালক তথা মানবসেবা ও ধৈর্যধারণের শিক্ষা দেন। পিতার ইন্তেকালের পরে তাঁর ব্যক্তিত্ব গঠনে মমতাময়ী মা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

শেখ সাদী (রহ.) শিরাজের বড় বড় জ্ঞানী ব্যক্তিদের নিকট শিক্ষা লাভের পর ইরাকের বাগদাদে গমন করেন এবং সেখানে তৎকালীন বিশ্ববিখ্যাত নিজামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য, হাদীস, তাফসির, আইনশাস্ত্র ও ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে অধ্যয়ন করেন।

তিনি বাগদাদ থেকে সিরিয়া, মরক্কো, আবিসিনিয়া ও হিজাজ ভ্রমণ করেন। ভ্রমণ শেষে জন্মভূমি শিরাজে ফিরে তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনাগুলি রচনা শুরু করেন।

৬৫৫ হিজরীতে তিনি তাঁর কাব্যগ্রন্থ “সাদী নামা” বা “বুস্তান” রচনা করেন এবং পরের বছর ৬৫৬ হিজরীতে তিনি “গুলিস্তান” রচনা করেন। এছাড়াও তাঁর অন্যান্য রচনাসমূহ হলো —
গাজালিয়াতে সাদী, হাজালিয়াত, কাসায়েদ, মারাছি, মুয়াল্লামাত ওয়া মুছাল্লাছাত, সাহাবিয়া, তারজিয়াত, রুবায়িয়্যাত ও মুফরাদাত।
তাঁর রচনাসমগ্র নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে “কুল্লিয়াতে সাদী”

সাদী প্রথম ইরানী কবি যাঁর রচনা ইউরোপীয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাঁকে সাহিত্যিকরা “ওস্তাদে সোখান” (Master of Speech), “পাদশাহে সোখান” (King of Speech), “শায়খে আজাল” (Forever Shaykh) ও “ওস্তাদ” (Master) উপাধিতে ভূষিত করেছেন।

তিনি ৬৯০ হিজরীতে শিরাজে ইন্তেকাল করেন। তাঁর সমাধি বর্তমানে “সা’দিয়া” নামে পরিচিত, যা ইরানে রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ৮৪৪ কিলোমিটার দূরে শিরাজ শহরে অবস্থিত।

শেখ সাদী (রহ.)-এর কবিতা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী ও ধর্মের মানুষের কাছে সমাদৃত। ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকার মতে, তাঁর বুস্তান বইটি সর্বকালের সেরা ১০০টি গ্রন্থের একটি।

শেখ সাদীর কবিতা বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে পারস্পরিক শান্তি, সহাবস্থান, অহিংসা, সম্প্রীতি ও সহযোগিতা তৈরিতে পথ দেখাচ্ছে।

মানবতার কবি শেখ সাদী (রহ.) বলেছেন—

“আদম সন্তান একই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ,
কেননা একটি মাত্র রত্ন থেকেই সবার সৃষ্টি।
যখন কোনো একটি অঙ্গ ব্যথাযুক্ত হয়ে পড়ে,
তখন অন্য অঙ্গগুলোও ব্যথায় কাতর হয়।
তুমি যদি অপরের দুঃখে দুঃখী না হও,
তবে তুমি মানুষ নামের যোগ্য নও।”

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় নিউজ

নীরব হলো নির্ভীক কলম: চলে গেলেন শ্রীপুরের ‘প্রিয় জামাল ভাই’

নবীপ্রেম ও মানবতার কবি শেখ সাদী (রহ.)

Update Time : ০৯:১৭:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫

নবীপ্রেম ও মানবতার কবি শেখ সাদী (রহ.)

আবু সালেহ

রবিউল আউয়াল মাসসহ বছরের যেকোনো সময়ে বিশ্বব্যাপী মিলাদ-মাহফিলগুলোর আয়োজনে সর্বাধিক পঠিত ইরানের শিরাজের হযরত শেখ সাদী শিরাজী (রহ.) লিখিত নাতে রাসূল (সা.) —
“বালাগাল উলা বি কামালিহি, কাশাফাদ দুজা বি জামালিহি, হাসুনাত জামিউ খিসালিহি, সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহি।”

এই নাতে রাসূল সম্পর্কে এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, বিশ্বের মুসলমানদের মাঝে হয়তো এমন কোনো মুসলমান পাওয়া যাবে না, যিনি এই নাতে রাসূল (সা.) টি গাননি বা শুনেননি। জানা যায়, তাঁর বিখ্যাত “বালাগাল উলা বি কামালিহি…” এর শেষ লাইন স্বয়ং রাসূল (সা.) স্বপ্নযোগে তাঁকে শিখিয়ে দিয়েছিলেন।

হযরত শেখ সাদী শিরাজি (রহ.) সপ্তম হিজরীর মানুষ। তিনি একাধারে বিশ্ববিখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, সুফি সাধক ও নৈতিকতার শিক্ষক। তাঁর পুরো নাম শায়েখ আবু মুহাম্মদ মুসলেহুদ্দীন সাদী ইবনে আব্দুল্লাহ শিরাজি। তিনি ৬০৬ খ্রিষ্টাব্দে ইরানের শিরাজ শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

বাল্যকালে পিতাকে হারিয়ে এতিম হয়ে যান তিনি। তাঁর পিতা তাঁকে জ্ঞান শিক্ষার পাশাপাশি নেক আমল, সত্যবাদিতা, খেদমতে খালক তথা মানবসেবা ও ধৈর্যধারণের শিক্ষা দেন। পিতার ইন্তেকালের পরে তাঁর ব্যক্তিত্ব গঠনে মমতাময়ী মা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

শেখ সাদী (রহ.) শিরাজের বড় বড় জ্ঞানী ব্যক্তিদের নিকট শিক্ষা লাভের পর ইরাকের বাগদাদে গমন করেন এবং সেখানে তৎকালীন বিশ্ববিখ্যাত নিজামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য, হাদীস, তাফসির, আইনশাস্ত্র ও ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে অধ্যয়ন করেন।

তিনি বাগদাদ থেকে সিরিয়া, মরক্কো, আবিসিনিয়া ও হিজাজ ভ্রমণ করেন। ভ্রমণ শেষে জন্মভূমি শিরাজে ফিরে তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনাগুলি রচনা শুরু করেন।

৬৫৫ হিজরীতে তিনি তাঁর কাব্যগ্রন্থ “সাদী নামা” বা “বুস্তান” রচনা করেন এবং পরের বছর ৬৫৬ হিজরীতে তিনি “গুলিস্তান” রচনা করেন। এছাড়াও তাঁর অন্যান্য রচনাসমূহ হলো —
গাজালিয়াতে সাদী, হাজালিয়াত, কাসায়েদ, মারাছি, মুয়াল্লামাত ওয়া মুছাল্লাছাত, সাহাবিয়া, তারজিয়াত, রুবায়িয়্যাত ও মুফরাদাত।
তাঁর রচনাসমগ্র নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে “কুল্লিয়াতে সাদী”

সাদী প্রথম ইরানী কবি যাঁর রচনা ইউরোপীয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাঁকে সাহিত্যিকরা “ওস্তাদে সোখান” (Master of Speech), “পাদশাহে সোখান” (King of Speech), “শায়খে আজাল” (Forever Shaykh) ও “ওস্তাদ” (Master) উপাধিতে ভূষিত করেছেন।

তিনি ৬৯০ হিজরীতে শিরাজে ইন্তেকাল করেন। তাঁর সমাধি বর্তমানে “সা’দিয়া” নামে পরিচিত, যা ইরানে রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ৮৪৪ কিলোমিটার দূরে শিরাজ শহরে অবস্থিত।

শেখ সাদী (রহ.)-এর কবিতা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী ও ধর্মের মানুষের কাছে সমাদৃত। ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকার মতে, তাঁর বুস্তান বইটি সর্বকালের সেরা ১০০টি গ্রন্থের একটি।

শেখ সাদীর কবিতা বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে পারস্পরিক শান্তি, সহাবস্থান, অহিংসা, সম্প্রীতি ও সহযোগিতা তৈরিতে পথ দেখাচ্ছে।

মানবতার কবি শেখ সাদী (রহ.) বলেছেন—

“আদম সন্তান একই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ,
কেননা একটি মাত্র রত্ন থেকেই সবার সৃষ্টি।
যখন কোনো একটি অঙ্গ ব্যথাযুক্ত হয়ে পড়ে,
তখন অন্য অঙ্গগুলোও ব্যথায় কাতর হয়।
তুমি যদি অপরের দুঃখে দুঃখী না হও,
তবে তুমি মানুষ নামের যোগ্য নও।”