
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় থাকা মো. নাজমুল আলম আজ কিশোরগঞ্জ রাজনীতিতে এক পরিচিত মুখ। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এক কৌশলগত নির্বাচনী সিদ্ধান্ত তাঁকে রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে।
মো. নাজমুল আলমের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু ১৯৮৩ সালে, যখন তিনি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র অবস্থায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এরপর ১৯৮৯ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলাকালীন প্রথমবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন।
১৯৯১ সালের শেষদিকে তিনি জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯৫ সালে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ১৯৯৯ সালে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ৫ অক্টোবর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন এবং পরবর্তীতে ২০১০ সালে পুনরায় এ দায়িত্ব পান।
২০১১ সালে তিনি স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে পাঁচবার কারানির্যাতনের শিকার হন তিনি। ২০১৪ সালে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেও গভীর রাতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে ফলাফল পরিবর্তনের অভিযোগ করেন।
২০১৬ সালে তিনি জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নিযুক্ত হন এবং পরবর্তীতে সদর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পান। আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁর উপস্থিতি ছিল নিরবচ্ছিন্ন, দাবি তাঁর নিজস্ব।
২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় নির্দেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, যদিও তাঁর জয়ের সম্ভাবনা ছিল প্রবল। সর্বশেষ, ২০২৪ সালের একতরফা জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি বিএনপির আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন তিনি।
তবে চলতি বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও পারিবারিক-সামাজিক চাপের মুখে এক প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে কৌশলগতভাবে মোকাবেলা করতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। এই সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে থাকা অবস্থায় তাঁকেসহ কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
তাঁর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দলীয় মহলে শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। কেউ এটিকে কৌশলগত রাজনৈতিক চাল হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ বলছেন—দলের নীতির পরিপন্থী এক পদক্ষেপ।দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ও ত্যাগ-তিতিক্ষার ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়া মো. নাজমুল আলম এখন রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনায় রয়েছেন।
তবে তিনি জানিয়েছেন, দলের প্রতি তাঁর আনুগত্য আগের মতোই রয়েছে এবং দলের বৃহত্তর স্বার্থে তিনি যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত।